বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন (হার্ডকভার)
বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন (হার্ডকভার)
৳ ৩৫০   ৳ ২৯৮
১৫% ছাড়
6 টি Stock এ আছে
Quantity  

তথ্য সাময়িকী সালতামামি – ২০২৩  অর্ডার করলে সাথে সালতামামি ২০২২ ফ্রি

১১৯৯ বা তার বেশি টাকার বই অর্ডারে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। কুপন: FREEDELIVERY

১২ মাসের তথ্য সাময়িকী (জানুয়ারী – ডিসেম্বর, ২০২৩)  এখন ৬০% ছাড়ে

Home Delivery
Across The Country
Cash on Delivery
After Receive
Fast Delivery
Any Where
Happy Return
Quality Ensured
Call Center
We Are Here

বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন

আমাদের দেশে প্রচলিত ইতিহাসের মধ্যে আমি নিজেকে খুঁজে পাইনা। আত্মপরিচয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের সন্তোষজনক কোন ধারণা নেই পাঠ্য বইয়ে, পত্রপত্রিকায়, আলাপে কিংবা বিতর্কে। সেকারণেই হয়তোবা, ইতিহাসের বই ছাপিয়ে শুরু হয় আমার সাহিত্যের পাঠ। এপার-ওপার দুই বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের লেখালেখির সাথে ঘটে পরিচয়। পাশাপাশি নানান ধরনের প্রবন্ধ, বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদ আর মার্ক্স-এঙ্গেলসের রচনাবলী নাড়াচাড়া করি। এমন করেই কেটে যেতে থাকে আমার কৈশরের সোনালী দিনগুলো । 
১৯৯৬ সালে এসে ক্যাডেট কলেজের পাঠ চুকে গেলে পরের বছর ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। বাবা এবং প্রায় সকল শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে স্বেচ্ছায় সমাজবিজ্ঞান পছন্দ করার কারণ ছিল একটাই – আমাদের সমাজকে বোঝার মধ্য দিয়ে আত্মপরিচয়ের খোঁজ করা। রাজা-বাদশাহ, সুলতান, নবাব আর তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিত্ব ও তাদের পরিবারের কাহিনীতে ভরা ইতিহাসে আমার আত্মপরিচয়ের হদিস না পেয়ে আসলাম সমাজবিজ্ঞানে। কিন্তু এই বিষয়ে এসেও আরেক নতুন সমস্যার উদ্রেক হল। দেখলাম পাঠ্যক্রমে, শ্রেণীকক্ষের আলাপে, ক্যাম্পাসের নানান পরিসরে আমাকে এবং আমি যে সমাজ থেকে এসেছি, অর্থ্যাৎ গ্রামীণ বাংলাদেশকে বেশ অনেকটাই অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। তথাপি সেই অন্তর্ভূক্তিতে কেন যেন মন ভরে না। 
স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের একজন হয়েও প্রায়শঃই নানান স্থানে নিজেকে অনাহুত, খানিকটা অবাঞ্ছিত হিসেবে আবিষ্কার করি। পারিবারিক পৃষ্ঠপোষকতা, বোর্ডের মেধাতালিকায় উপরের দিকে স্থান থাকা, ক্যাডেট কলেজের পড়াশোনা, সর্বোপরি সর্বদা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে থাকা একদল প্রাণপ্রিয় বন্ধুর উপস্থিতি সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলি। মাঝে মাঝে ভাবতে থাকি - কেন এমন হয়? সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হয়েও জহুরুল হক আর বুয়েটের রশীদ হলে কাটাই সপ্তাহের অধিকাংশ সময়। বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, হাসিঠাট্টায়, হইহুল্লোরে দিনগুলো দ্রুত কেটে যেতে থাকে। কিন্তু যেই মাত্র নিজের রুমে ফিরে আসি, অথবা কলাভবনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কাছে যাই, নিজেকে কেমন যেন মানিয়ে নিতে পারি না। শুধুই মনে হতে থাকে - অপিরিচিত কোন বাড়িতে বিনা-দাওয়াতে ঢুকে পরেছি।
এভাবেই প্রথমবর্ষ কেটে গেলো। ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল যখন হাতে পেলাম তখন দেখলাম প্রত্যাশার চেয়ে অনেক অনেক খারাপ করেছি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে ভর্তি হওয়ার কারণে যে আত্মবিশ্বাস ছিল তা’ ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। কিন্তু তার থেকে গুরুতর সমস্যা হল এই যে, একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতার বোধটা আমাকে আরো প্রবলভাবে চেপে ধরল। আমি অনুভব করলাম, এই স্থান/সমাজ/দেশ আমার না। 
নিজের বাড়ীতে থাকার যে স্বস্তি, সেটা আমি প্রায় কখনোই অনুভব করিনা। বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা বাড়িয়ে দিই। দিনে রাতে যখন তখন ক্যাম্পাসের এখানে সেখান হেঁটে চলি ফিরি। আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে সময়গুলো পার করে দেওয়ার কসরত করি। দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া বাদবাকি সব ক্লাসই যান্ত্রিক মনে হতে থাকে। সময়ও যেন বিশ্বাসঘাতকতা করে – এক বছরের কোর্স শেষ হতে দেড়-দুই বছর চলে যায়। চার বছরের স্নাতক কোর্স লম্বা হতে হতে ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে।
বরাবরই মুখস্ত করার ক্ষমতা ছিল বেশ। সেকারণে চোথা মুখস্ত করে প্রথম শ্রেণী পেতে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু যে শূন্যতার অনুভূতি নিয়ে শুরু হয়েছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, তা যেন ক্রমশই বেড়েই চলে। লেখাপড়া শেষে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবো এমনই ছিলই আজন্ম লালিত স্বপ্ন। সেকারণে আর কোন পেশার কথা কখনো ভাবিনি। মাস্টার্স পাশের পর দেখি, সেখানেও বদ্ধ দুয়ার। এমন গভীর হতাশার মধ্যে পরপর দুইদিন ফুলব্রাইট আর মনবুশো বৃত্তির চূড়ান্ত মনোনয়নের সংবাদে বেশ সান্ত্বনা পাই। ভাবি, বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরলে নিশ্চয়ই স্বপ্নের পেশায় ঢুকতে পারবো। আত্মপরিচয়ের অসমাপ্ত খোঁজটা তখন নেওয়া যাবে।

২০১৫ সালের মাঝামাঝি পিএইচডি থিসিস জমা দেওয়ার পর কয়েক মাসের একটা লম্বা বিরতি ছিল। কি মনে করে গোলাম মুরশিদের ‘হাজার বছরে বাঙালি সংস্কৃতি’ বইটা হাতে নিই। পড়াশেষে তৎক্ষণাৎ উপলব্ধি করতে পারি কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের উপস্থিতিকে আমার কাছে অনাহুত এবং অবাঞ্ছিত মনে হতো। এটাও বুঝলাম যে, কেন আমার মধ্যে একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি হয়েছিল। এই বইটা পড়া শেষ করে আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ প্রবন্ধ এবং অজয় রায়ের ‘আদি বাঙালিঃ নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ বইও পড়ে ফেললাম। জানলাম যে, বাঙালির ইতিহাস আসলে বাঙালি হিন্দুর ইতিহাস। 
বাঙালি জাতির ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ তীব্রতর হওয়ায় এ সংশ্লিষ্ট সাম্প্রতিককালের আরো কিছু বই-প্রবন্ধের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি সেখানে উল্লিখিত প্রবন্ধ আর বইয়েরই প্রতিধ্বনি। অর্থ্যাৎ, বাঙালি জাতি মানেই হিন্দু জাতি। যেখানে বলা হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষেরা অতীতের কোন এক সময়ে নিম্নবর্ণের হিন্দু ছিল। তাদের কেউ মুসলমান সুলতানের তলোয়ারের ভয়ে, আবার কেউবা হিন্দুধর্মের কঠোর বর্ণপ্রথা থেকে মুক্তির আশায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। অন্যদিকে ভারতবর্ষ ভেঙে ইসলামী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গঠিত নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে বাংলাদেশী মুসলমানরা নিম্নস্তরের নাগরিকের মর্যাদা পেত, এবং একইসাথে নানান বর্ণবাদী আচরণের শিকার হত, যা এই অনুমানকেই সমর্থন করে যে, বাঙালি মুসলমানের প্রকৃত গন্তব্য বাঙালিয়ানাতেই, তথা হিন্দুত্বেই। সেকারণেই, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে এক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য বাঙাালি মুসলমানরা একটি নতুন রাষ্ট্র পেলেও পুনরায় বাঙালিত্বে ফিরে যাওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। এজন্যই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বুদ্ধিজীবি বদরউদ্দিন উমর ১৯৭১-কে বলেন বাঙালির নিজ ঘরে ফেরার বছর। 
যথারীতি আমাদের জাতির পরিচয় থেকে মুসলমানিত্বের চিহ্নসমূহ মুছে ফেলে প্রকৃত বাঙালি হয়ে ওঠার প্রয়াস দেখা যায়। মাঝখানে নানান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গিয়ে ১৯৯৬ সালে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারক এবং বাহকরা পুনরায় রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসে। বিগত সেনাশাসন ও ইসলামী জাতীয়তাবাদী সরকারসমূহের আমলে যে মুসলিম পরিচয়ের স্বীকৃতির সূচনা হয়েছিল, তাকে আবার সংশোধন করে বাঙালি পরিচয়ে ফেরার আয়োজন শুরু হয়। ঠিক সেই সময়েই ক্যাডেট কলেজের গন্ডিবদ্ধ জীবন থেকে বের হয়ে আমি বাঙালি হয়ে ওঠার আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে নিজেকে অনাহুত এবং অবাঞ্ছিত অনুভব করার কারণ সম্ভবত এটাই ছিল।

আমার মনে বারংবারই একই জিজ্ঞাসা - বাঙালি মুসলমান যদি হিন্দু থেকেই ধর্মান্তরিত হয়ে থাকে, তাহলে আবার শেকড়ে ফিরে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক এবং তাতে আনন্দিতই হওয়ার কথা। কিন্তু কেন আমি সেটা মনে নিতে পারি না? এই দোলাচালের ভেতরে থেকেই, বাঙালি মুসলমানের শেকড় হিন্দুত্বে কি না সেটা জানার প্রয়াস শুরু হল। নতুন করে এ সংক্রান্ত বইপত্র, নথি ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। ক্যালিফোর্নিয়াতে সমাজবিজ্ঞানে উচ্চতর গবেষণা করতে গিয়ে যে তত্ত্ব ও পদ্ধতিগত জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ পেয়েছি, এবার সেগুলোকে কাজে লাগাতে শুরু করলাম।
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম - বাঙালি মুসলমান নিয়ে প্রচলিত ইতিহাস কোন ঐতিহাসিকের গবেষণা থেকে আসেনি, আর পরবর্তিতে না কোন ঐতিহাসিকের গবেষণা একে সঠিক হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে! উল্লিখিত প্রবন্ধ আর বই দুটোর রচয়িতাদের কারোরই ইতিহাস গবেষণায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ছিল না। হরহামেশাই যাদের এ সংক্রান্ত লেখাঝোকা প্রকাশিত হচ্ছে, তাদের প্রায় সকলেই হয় বাংলা সাহিত্যে, নুতবা দর্শনে, এমনকি পদার্থ বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা নিয়ে রচনা করে চলেছেন বাঙালি জাতির ইতিহাস! অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে ইতিহাস গবেষক হিসেবে খ্যাতিমানরা আছেন ইতিহাসের অন্যান্য বিষয় নিয়ে। অর্থ্যাৎ, জাতির এবং ব্যক্তির আত্মপরিচয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মূলধারার ইতিহাস চর্চা চলছে ইতিহাস গবেষণায় প্রশিক্ষণবিহীন গবেষক-লেখকদের হাতে। এই বিষয়টা অনেকটা হাসপাতালের চিকিৎসার কার্যক্রম ডাক্তারিবিদ্যাবিহীন পদাধিকারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার মতো।
ফলাফল যা’ হওয়ার কথা, তাই হয়েছে। সেই ১৮৮১ সালে সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায় লিখে গেছেন, বাঙালি মুসলমান নিশ্চয়ই নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছে। আমরা দেখছি ১৪০ বছর পরে এসেও আমাদের বর্তমান বুদ্ধিজীবিরা তথ্যবিহীন সেই তত্ত্বেই ঈমান রেখে বাঙালি মুসলমানের ইতিহাসচর্চা এবং সেই অনুযায়ী আমাদের জাতীয় পরিচয় নির্মাণ করে চলেছেন।
কিন্তু কেন?
বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হয়ে প্রথমে মুসলমানের জাতিরাষ্ট্র পাকিস্তান, তারপর বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরেও কেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী একজন সাহিত্যিকের কল্পিত ধারণাকে যথাযথ একাডেমিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরীক্ষা করা হয় না?
কেন ইতিহাস গবেষণায় প্রয়োজনীয় তত্ত্ব ও পদ্ধতিগত উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গবেষকদের দিয়ে বাঙালি মুসলমান জাতির উদ্ভব ও বিকাশের ইতিহাস রচিত হয়না?

Title : বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন
Author : হাসান মাহমুদ
Publisher : স্বরে অ
ISBN : 9789848047446
Edition : 2022
Number of Pages : 176
Country : Bangladesh
Language : Bengali

হাসান মাহমুদ ডিরেক্টর, শারিয়া আইন ও ইসলামিক ল’ মুসলিম ক্যানাডিয়ান কংগ্রেস, সহযােগী সদস্য, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেস, কানাডা, আমেরিকা ও ইউরােপে অনেক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, সেমিনার, রেডিও ও টেলিভিশনে- “ইসলামে মানবাধিকার’ এর প্রবক্তা। প্রকাশিত বই : আল ভোঁদড়ের দেশ, শারিয়া কি শারিয়া কেন, ইসলাম ও শারিয়া, থ্রেট অফ। পলিটিক্যাল ইসলাম (ইংরেজী) যন্ত্রস্থ। শারিয়ার ওপর তথ্য সিনেমা ‘হিলা ও তথ্য নাটক ‘রক্তগােলাপ’ । শারিয়া- বিষয়ক ২টি তথ্য ভিসিডি (বাংলা ও ইংরেজী)।


If you found any incorrect information please report us


Reviews and Ratings
How to write a good review


[1]
[2]
[3]
[4]
[5]